যেকোনো পোল্ট্রি ফার্মে নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে। পোল্ট্রি ফার্ম পরিচালনার সময় সতর্কতার সাথে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরগ্রাম ব্যবহার না করলে দুর্ঘটনার যথেষ্ট ঝুঁকি থাকে। দূর্ঘটনার কারণে ব্যক্তি, সামাজিক ও জাতীয় পর্যারে প্রচুর ক্ষতি সাধিত হয়। দুর্ঘটনা কবলিত একজন দক্ষ কর্মী আহত বা নিহত হলে তার পরিবার, দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কাজ করার সময় সকল দুর্ঘটনা হতে নিজেকে রক্ষা করার জন্য প্রত্যেক কর্মীর সতর্কতা অবলম্বন করা উচিৎ। ফার্মের দক্ষ কর্মী এবং যন্ত্রপাতি উভয়ই মূল্যবান সম্পদ। দক্ষ কর্মীগণ সতর্কতার সাথে এবং নিরাপদে বিভিন্ন ফার্মে কাজ করে মানসম্মত লাভজনক ডিম ও মাংস উৎপাদন করবে এটাই কাম্য। অন্যথায় সতর্কতার অভাবে দুর্ঘটনাজনিত কারণে কর্মীদের দৈহিক ক্ষয়ক্ষতি ও ফার্মের ক্ষয়ক্ষতি অলাভজনক উৎপাদনের কারণ হয়, এটা আমাদের কাম্য নয়। "Safety First." কাজের পূর্বে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। পোল্ট্রি ফার্মে কাজ করার সময় যেকোনো দুর্ঘটনা এড়াতে নিরাপদ পোশাক ও নিরাপদ সরঞ্জামাদি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি।
এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-
আমাদের আশেপাশে অনেক পোল্ট্রি ফার্ম দেখতে পাই। এই ধরনের ফার্মগুলো হতে পারে লেয়ার ফার্ম, ব্রয়লার ফার্ম, টার্কি ফার্ম, ডাক ফার্ম । এই সকল ফার্ম গুলোতে হ্যান্ড টুলস, বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি, ইনকুবেটর, মিট কাটার মেশিন ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি থাকে যা ফার্মে ব্যবহার করা হয়। ফার্ম বা ওয়ার্কশপে প্রবেশ হতে শুরু করে ত্যাগ করা পর্যন্ত কিছু নিয়ম মেনে চলতে হয়। নিরাপদে কাজ করা ও নিরাপত্তা রক্ষায় এসব নিয়ম সতর্কতার সাথে মেনে চলা প্রয়োজন।
১.২.১ স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ শ্রম আইন, ২০০৬ (২০০৬ সনের ৪২ নং আইন) এর ধারাসমূহ:
ধারা- ৫১ ও বিধি-৪০: কর্মক্ষেত্রের পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা: প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে এবং কোন নর্দমা, পায়খানা বা অন্য কোনো জঞ্জাল হতে সৃষ্ট দূষিত বাষ্প হতে মুক্ত রাখতে হবে এবং বিশেষ করে-
(ক) প্রতিষ্ঠানের মেঝে, কর্মকক্ষ, সিঁড়ি, যাতায়াতের পথ হতে প্রতিদিন ঝাড়ু দিয়ে ময়লা ও আবর্জনা ঢাকনা দেওয়া বাক্সে অপসারণ করতে হবে, যাতে উক্ত আবর্জনা দুর্গন্ধ বা জীবাণু বিস্তার করতে না পারে; ধাতব পদার্থ, উৎকট গন্ধময় আবর্জনা, রাসায়নিক আবর্জনা ও মেডিকেল আবর্জনা ভিন্ন ভিন্ন বাক্সে প্রতিদিন নিয়মিত অপসারণ করতে হবে।
(খ) প্রত্যেক কর্মক্ষেত্রের মেঝে সপ্তাহে অন্ততঃ একদিন অবস্থা ভেদে এবং কাজের প্রকৃতি ভেদে পানি দ্বারা ধুইতে হবে এবং প্রয়োজনে ধোয়ার কাজে জীবাণুনাশক ব্যবহার করতে হবে। অবস্থাভেদে জীবাণুনাশক ব্যবহার করে ভিজা কাপড় দ্বারা মেঝে ধুয়ে দিতে হবে।
(গ) যে ক্ষেত্রে উৎপাদন প্রক্রিয়ার কারণে কোনো মেঝে এমনভাবে ভিজে যায় যে, এর জন্য পানি নিষ্কাশনের প্রয়োজন হয়, সেক্ষেত্রে পানি নিষ্কাশনের উপযুক্ত ব্যবস্থা করতে হবে। ধারা ৫১(গ) বিধি ৪২ অনুযায়ী কর্মকক্ষ ভিজে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকলে-
(১) উক্ত মেঝে অবশ্যই অভেদ্য পদার্থ (Impervious material) দ্বারা নির্মিত হতে হবে;
(২) উক্ত মেঝের নির্মাণ কৌশল ঢালু বিশিষ্ট এবং উপযুক্ত নিষ্কাশন নালার মাধ্যমে কারখানার মূল নর্দমা ব্যবস্থার সাথে সংযুক্ত থাকতে হবে, যাতে নিষ্কাশিত পানি অথবা কোনো তরল পদার্থ মেঝেতে জমে থাকতে না পারে।
(ঘ) প্রতিষ্ঠানের সকল অভ্যন্তরীণ দেওয়াল, পার্টিশন, ছাদ, সিঁড়ি, যাতায়াত পথ-
(১) রং অথবা বার্নিশ করা থাকলে, প্রতি তিন বছরে অন্ততঃ একবার পুনরায় রং বা বার্নিশ করতে হবে।
(২) রং অথবা বার্নিশ করা এবং বহিঃর্ভাগ মসৃণ হলে, প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্ততঃ একবার ধারা- ৫১(ঘ) বিধি ৪৩ অনুযায়ী পানি, ব্রাশ ও ডিটারজেন্ট দ্বারা ঘষে পরিষ্কার করতে হবে।
(৩) অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রতি চৌদ্দ মাসে অন্ততঃ একবার চুনকাম বা রং করতে হবে, এবং (ঙ) দফা (ঘ) তে উল্লিখিত কার্যাবলী সম্পন্ন করার তারিখ ধারা ৫১(ঘ) বিধি- ৪৪ অনুযায়ী ফরম- ২০ ব্যবহার করে রেজিস্টারে লিপিবদ্ধ করে রাখতে হবে।
ধারা- ৫২ ও বিধি-৪৫ বায়ু চলাচল ও তাপমাত্রা
(১)প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের জন্য পর্যাপ্ত বায়ু চলাচল ব্যবস্থা রাখতে হবে।
(২) উক্তরূপ প্রত্যেক কক্ষে তাপমাত্রা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে এবং প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের প্রতিটি কর্মকক্ষে নির্মল বায়ু প্রবাহের সুবিধার্থে পর্যাপ্ত সংখ্যক বিপরীতমুখী জানালার ব্যবস্থা থাকতে হবে; তবে শর্ত থাকে যে, যেখানে ভেন্টিলেটরের ব্যবস্থা রাখা সম্ভব নয় সেখানে এক্সজস্ট ফ্যান (Exhaust Fan) স্থাপন করা যাবে, যাতে সেখানে কর্মীগণ মোটামুটি আরামে কাজ করতে পারেন, এবং যাতে কর্মীগণের স্বাস্থ্য হানি রোধ হয়; আরও শর্ত থাকে যে, কর্মক্ষেত্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ (Dry & Wet) ব্যবস্থা থাকলে বায়ু চলাচলের উক্ত ব্যবস্থার প্রয়োজন হবে না; ধারা ৫২ (২) অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মকক্ষে অন্ততঃ একটি তাপ পরিমাপক যন্ত্র (থার্মোমিটার) সচল অবস্থায় রাখতে হবে এবং ইহা যথাযথ মানসম্পন্ন হতে হবে এবং কর্মকক্ষের দেয়ালের দৃশ্যমান স্থানে ইহা স্থাপন করতে হবে।
(৩) উপ-ধারা (২) এর প্রয়োজনে কক্ষের দেওয়াল এবং ছাদ এমনভাবে তৈরি করতে হবে যাতে উক্ত তাপমাত্রা বৃদ্ধি না পায়, এবং যতদূর সম্ভব কম থাকে ।
ধারা- ৫৬: অতিরিক্ত ভীড় (Extra crowd )
(১) কোনো প্রতিষ্ঠানের কোনো কর্মকক্ষে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থ্য হানি হয় এই প্রকার অতিরিক্ত ভীড় করা যাবে না ।
(২) উপর্যুক্ত বিধানের হানি না করে, প্রত্যেক কর্মকক্ষে কর্মরত প্রত্যেক শ্রমিকের জন্য অন্ততঃ ৯.৫ কিউবিক মিটার পরিমাণ জায়গার ব্যবস্থা করতে হবে।
ব্যাখ্যাঃ এই উপ-ধারার প্রয়োজনে, কোনো ঘরের উচ্চতা মেঝে হতে ৪.২৫ মিটারের অধিক হলে এটি বিবেচনায় আনা হবে না ৷
(৩) যদি প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোন মালিককে অনুরোধ করে তাহলে কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক কর্মকক্ষে এই ধারার বিধান অনুযায়ী সর্বোচ্চ কতজন লোক কাজ করতে পারবেন, সে সম্পর্কে তাকে একটি নোটিশ লটকিয়ে দিতে হবে।
(৪) প্রধান পরিদর্শক লিখিত আদেশ দ্বারা কোনো প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষকে এই ধারার বিধান হতে রেহাই দিতে পারবেন, যদি তিনি এই মর্মে সন্তুষ্ট হন যে, উহাতে কর্মরত শ্রমিকগণের স্বাস্থের প্রয়োজনে এই বিধান মানার প্রয়োজন নাই ।
(১) কোনো প্রতিষ্ঠানের প্রত্যেক অংশে, যেখানে শ্রমিকগণ কাজ করে বা যাতায়াত করেন, যথেষ্ট স্বাভাবিক বা কৃত্রিম বা উভয়বিধ আলোর ব্যবস্থা করতে হবে ।
(২) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানের কর্মকক্ষ আলোকিত করার জন্য ব্যবহৃত সকল কাঁচের জানালাসমূহের উভয় পার্শ্ব পরিষ্কার রাখতে হবে ।
(৩) প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানে-
(ক)কোনো স্বচ্ছ পদার্থ বা বাতি হতে বিচ্ছুরিত বা প্রতিফলিত আলোকচ্ছটা, অথবা
(খ) কোনো শ্রমিকের চোখের উপর চাপ পড়তে পারে বা তার দুর্ঘটনার ঝুঁকি থাকতে পারে, এরূপ কোনো ছায়া সৃষ্টি, প্রতিরোধ করার জন্য কার্যকর ব্যবস্থা থাকতে হবে ।
১.৩.১ স্বাস্থ্য (Health):
স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল। একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মীরা শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকলে তারা মনোযোগ দিয়ে কাজ করতে পারে না। ফলে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা বেশি থাকে এবং কাজে অনুপস্থিতির হার বেড়ে যায়। ফলে কর্মী এবং মালিক উভয় পক্ষই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সুতরাং কর্মী, প্রশাসন এবং মালিকপক্ষের সকলকেই স্বাস্থ্য সচেতন থাকা একান্ত আবশ্যক ।
১.৩.২ স্বাস্থ্যবিধি (Hygiene ) :
স্বাস্থ্যবিধি হচ্ছে এমন একটি বিজ্ঞান যা আমাদেরকে অসুস্থ হওয়ার পূর্বে তার প্রতিরোধ এবং স্বাস্থ্য সচেতনতার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে আলোচনা করে থাকে। একজন মানুষের শারীরিক, মানসিক, পারিপার্শ্বিক ও সামাজিক অবস্থার পূর্ণাঙ্গ সুস্থ জীবনই হলো ব্যক্তিগত স্বাস্থ্য। ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবিধি যেমন ভাবে আমাদের নিরাপদ রাখে তেমনিভাবে অন্যদেরকেও অসুস্থ হওয়া থেকে নিরাপদ রাখে ।
১.৩.৩ পেশাগত রোগসমূহ (Occupational Diseases):
কর্মস্থলের পরিবেশ এবং কাজের ধরনের কারণে কর্মরত অবস্থায় একজন কর্মী যে সকল রোগ বা ব্যাধিতে আক্রান্ত হয় বা হতে পারে তাদেরকে পেশাগত রোগ বলা হয় ।
কর্মরত অবস্থায় একজন শ্রমিক বা কর্মচারি সাধারণত ৩টি কারণে অসুস্থতায় ভুগতে পারে-
(ক) কর্মস্থলের পরিবেশ সংক্রান্ত: বিশৃঙ্খলা, উচ্চ শব্দ, উচ্চ তাপমাত্রা, পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের অভাব, পর্যাপ্ত আলোর অভাব এবং ধূলা বালির কারণে একজন কর্মী নানা রকম রোগে আক্রান্ত হতে পারে। যেমন- দৃষ্টিশক্তি কমে যাওয়া, শ্রবণশক্তি কমে যাওয়া, ফুসফুস সংক্রান্ত রোগ, যক্ষা, শ্বাসনালীর প্রদাহ ইত্যাদি ।
(খ) কর্মী সংক্রান্ত: প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব, নির্দেশিকা সংক্রান্ত জ্ঞানের অভাব, বয়স ও দৈহিক সামর্থ্যের অভাবেও নানা রকম অসুস্থতা দেখা দিতে পারে ।
(গ) মানসিক অসুস্থতা: কর্মক্ষেত্রে উর্ধ্বতন কর্মকর্তা বা সহকর্মীদের আচার-আচরণ, বৈষম্য, চাকুরির অনিশ্চয়তা, অতিরিক্ত কাজের চাপ, দীর্ঘ কর্মঘন্টা, অকারণে হয়রানি, নির্যাতন একজন কর্মীর উপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে যা তার কর্মক্ষেত্রের উৎসাহ ও উদ্দীপনা কমিয়ে দেয় এবং কাজের সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে ধীরে ধীরে একসময় সে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে।
নিরাপদে খাদ্য প্রস্তুত এবং প্রক্রিয়াজাতকরণের জন্য নিম্নলিখিত অভ্যাসগুলির প্রতিমনোযোগ দিতে হবে-
রোগ বহন: (Carrying diseases)
খাদ্য হ্যান্ডলারদের স্বাস্থ্যকর কাজের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকা এবং পরিষ্কারভাবে কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ। কেউ অসুস্থ হলে খাবারের সাথে কাজ করা যাবে না। মনে রাখতে হবে যে বাড়ির মতো করে কর্মস্থলে কাজ করা উচিত নয়। রোগ মানুষের দ্বারা এক মানুষ থেকে অন্য মানুষকে আক্রান্ত করে কিন্তু তারা বুঝতে পারে না যে তারা অসুস্থ কারণ তাদের অসুস্থতার কোনো উপসর্গ নেই। অসুস্থ ব্যক্তির কনভেলসেন্ট ক্যারিয়ার হতে পারে, যার মানে তারা রোগটি বহন করতে পারে এবং ১২ মাস পর্যন্ত মানুষকে সংক্রামিত করতে পারবে। এই কারণগুলোর জন্য সব খাদ্য পরিচালকদের তাদের ডাক্তারকে জানাতে হবে যে তারা খাদ্য শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে।
ফুড হ্যান্ডেলারদের যদি নিম্নোক্ত সমস্যা দেখা দেয় তবে অবশ্যই তাদের কাজ হতে বিরত থাকতে হবে:
১. তীব্র ডায়রিয়া সহ তীব্র গ্যাস্ট্রোর দ্বারা আক্রান্ত হলে;
২. কলেরা, অ্যামোবিক ডেসেনট্রি বা ব্যাসিলারি দ্বারা আক্রান্ত হলে;
৩. হেপাটাইটিস-এ তে আক্রান্ত হলে;
৪. টেনলা সোলাম ফিতাকৃমি (Tape worm) সংক্রমণের শিকার হলে;
৫. যক্ষ্মার সংক্রামক অবস্থায়;
৬. ঠান্ডা বা ফ্লু এর উপসর্গগুলো দেখা দিলে ।
আহত এবং রোগের জন্য রিপোর্টিং করার নীতি (Policies for Reporting Illness and Injury) খাবারের সাথে কাজ করার আগে খাদ্য সরবরাহকারীদের প্রতিষ্ঠানে ম্যানেজারের কাছে স্বাস্থ্যগত সমস্যার প্রতিবেদন করা উচিত। কাজ করার সময় যদি তারা অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে তাদের অবস্থার রিপোর্ট করতে হবে এবং যদি খাদ্য বা সরঞ্জাম দূষিত হয়, তাহলে খাদ্য হ্যান্ডলারের কাজ বন্ধ করতে হবে ও ডাক্তারকে জানাতে হবে।
ফুড হ্যান্ডেলারদের তাদের স্বাস্থ্যের সমস্যাগুলো ম্যানেজারের কাছে রিপোর্ট করা নিম্নোক্ত কারণে গুরুত্বপূর্ণ:
১. তাদের অসুস্থতা খাবার দূষিত করতে পারে;
২. তাদের অসুস্থতা খাবারের মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছে ছড়িয়ে পড়তে পারে;
৩. তাদের অসুস্থতার কারণে যদি খাবারের বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয় তাহলে ব্যবসার সুনাম ক্ষুণ্ন হবে এবং কারণ ব্যবসার আর্থিক ক্ষতি হবে।
খাদ্য হ্যান্ডলার যখন খাদ্য বা খাদ্য লেনদেনের উপরিভাগের সাথে কাজ করে তখন কোনো কাটা, পোড়া, ক্ষত, ত্বক সংক্রমণ থাকলে সেটি একটি ব্যান্ডেজের সাথে আবৃত রাখা উচিত। হাতের ব্যান্ডেজের উপর ওয়াটার প্রুফ ও ডিস্পোজবল গ্লোভস পড়া উচিত।
হেপাটাইটিস এ' এর জন্য টিকা (Vaccination for Hepatitis A):
হেপাটাইটিস এ লিভারের একটি রোগ সৃষ্টিকারী প্রদাহ। খাদ্যসামগ্রী ব্যবসার মুখোমুখি সব খাদ্য বহির্ভূত অসুস্থতাগুলির মধ্যে হেপাটাইটস এ' কেবল একমাত্র যেটি টিকা দ্বারা প্রতিরোধ করা যেতে পারে। হেপাটাইটিস ‘এ’ ছড়িয়ে পড়া রোধ করার জন্য যথাযথ হ্যান্ড ওয়াশ ও ভ্যাকসিন দেওয়া একটি কার্যকরী পদক্ষেপ হতে পারে ।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের সমস্যা থেকে খাদ্য দূষণের ঘটনাগুলো প্রতিবেদন করা-
যে কোনো প্রকার প্রতিকূল অবস্থাকে প্রতিরোধের মাধ্যমে নিরাপদের সাথে কাজ করাকে অকুপেশনাল সেফটি বা পেশাগত নিরাপত্তা বলে ।
পেশাগত নিরাপত্তা তিন প্রকার, যথা-
(১) ব্যক্তিগত নিরাপত্তা (Personal Safety);
(২) যন্ত্রপাতি ও মেশিনের নিরাপত্তা (Tools and Machinery Safety)
(৩) কারখানার নিরাপত্ত (Factory Safety)।
দুর্ঘটনার হাত থেকে নিজেকে রক্ষা করার জন্য যে সকল সাবধানতা মেনে চলা হয়, তাই ব্যক্তিগত নিরাপত্তা। শিল্প-কারখানায় কর্মীগণ ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করার জন্য ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার করে থাকে ।
কর্মস্থলে কার্যাবস্থায় দুর্ঘটনার ঝুঁকি হতে কর্মীকে বাঁচানোর জন্য যে সমস্ত সাজ সরঞ্জাম ও পোষাক পরিচ্ছদ ব্যবহার করা হয়, সেগুলিকে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরঞ্জাম বা পিপিই বলা হয়। একজন ব্যক্তির কোনো অঙ্গ- প্রত্যঙ্গকে সম্ভাব্য ক্ষতি বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা হবে তার ওপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সরজ্ঞাম (পিপিই) নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়
ক) চোখের সুরক্ষা সরঞ্জামঃ
বিপদের উৎস- ছিটকে আসা রাসায়নিক পদার্থ বা ধাতব বস্তু, ধুলাবালি, কাটলিস্ট পাউডার, প্রোজেক্টাইল, গ্যাস, বাষ্প এবং রেডিয়েশন। চোখের জন্য পিপিই- নিরাপদ চশমা, গগলস, ফেস শিল্ড (মুখের ঢাকনা ), ইত্যাদি ।
খ) কানের সুরক্ষা উপাদান:
বিপদের উৎস - শব্দের মাত্রা ৮৫ ভিনি এর অধিক হলে শব্দ দূষণ হয়। পিপিই- ইয়ারগ্লাস, ইয়ার মাফ, কান টুপি ইত্যাদি ।
গ) মাথার জন্য সুরক্ষা উপাদানঃ
বিপদের উৎস- উপর থেকে কোনো বস্তু পড়লে, শক্ত বস্তুর আঘাত, ঘূর্ণায়মান বস্তুতে চুল পেঁচিয়ে যাওয়া। মাথার জন্য সিপিই- হেলমেট, মোটা বা স্ফীত টুপি।
ঘ) হেয়ার নেট:
মাথার চুল ঢাকার জন্য হেয়ার নেট। গুরুত্বপূর্ণ হেয়ার নেট দুইটি উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হয়। প্রথমত, মাথার চুলকে খাবার থেকে দূরে রাখে, উপকরণ ও যন্ত্রপাতি পরিষ্কার এবং স্বাস্থ্যসম্মত রাখে। দ্বিতীয়ত, কর্মীদের হাত চুলের স্পর্শ থেকে দূরে রাখে।
ঙ) শ্বাসযন্ত্র-এর সুরক্ষা উপাদান:
বিপদের উৎস- ধুলাবালি, তাপ, অক্সিজেন এর ঘাটতি ইত্যাদি। পিপিই- ফেস মাস্ক, শ্বাসযন্ত্র ইত্যাদি।
চ) শরীর এর জন্য সুরক্ষা উপাদান:
বিপদের উল্কা- অতিরিক্ত তাপমাত্রা, খারাপ আবহাওয়া, ছিটকে আসা কোনো রাসায়নিক পদার্থ বা ধাতব খন্ড, ভয়ানক গতিতে বায়ু প্রবাহ, সুচালো কোনো বস্তু শরীরে ঢুকে পড়া এবং ধুলাবালি দ্বারা দূষণ। শরীর এর জন্য পিপিই- বয়লার সুট, পিপিই সূর্ট, ভেস্ট, অ্যাইন, পুরো শরীর ঢাকা সুট, জ্যাকেট ইত্যাদি।
ছ) হাত এবং বাহু (Arm) এর জন্য সুরক্ষা সরঞ্জামঃ
বিপদের উৎস অধিক তাপমাত্রা, সুঁচালো কোনো বস্তু, ভারী কোনো বস্তু, বৈদ্যুতিক শক, রাসায়নিক পদার্থ, চর্ম সংক্রামক। পিপিই- হাত মোজা, আর্মলেট এবং মিটস্ (বাহুর আবরণ বিশেষ) ইত্যাদি।
জ)পারের পাতার সুরক্ষা সরঞ্জাম :
বুট: পড়ন্ত বস্তু, ধারালো বস্তু, গরম বন্ধ এবং পিচ্ছিল যা থেকে পাকে রক্ষা করতে হবে। এজন্য কর্মীকে অবশ্যই ফুট গার্ড সেফটি সু, বুট এবং লেপিংস ব্যবহার করতে হবে। গরম ধাতু নিয়ে কাজ করার সময় কখনোই খালি পায়ে কাজ করা যাবে না।
বিপদের উৎস-
পিচ্ছিল মেঝে, ভিজা মেঝে, ধারালো বস্ত্র, পড়ে থাকা বন্ধ, রাসায়নিক শ্বাস এবং অন্যান্য তরল পদার্থ ইত্যাদি। পিপিই- সুরক্ষা জুতা, সুরক্ষা বুট, লেলিনস (মোটা কাপড়ের রি পারের আচ্ছাদন), স্প্যাটি (পাতলা আচ্ছাদন) ইত্যাদি। সেফটি সুজ বা নিরাপদ জুতা কর্মীকে ভারী ধাতব উত্তপ্ত গলিত ধাতু, ধাঁরালো বস্তু উপর থেকে পড়ে আঘাত থেকে রক্ষা করে। এমনকি, বৈদ্যুতিক শক্ থেকেও কর্মীকে রক্ষা করে।
স্বাস্থ্য এবং নিরাপত্তা ধারা ১৯৯৫, অনুসারে সম্ভাব্য ক্ষতির বা দূর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করার জন্য পিপিই ব্যবহার করতে হবে। দূষণ কমানোর জন্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদান ব্যবহার করা ঠিক নয়। কারণ কোনো সতর্কতা বার্তা ছাড়াই এগুলো মাঝে মধ্যে শ্রমিকদের পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়। ঝুঁকির উপযুক্ত নিরাপত্তা প্রদানে পিপিই এর কিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে-
ব্যক্তিগত নিরাপত্তা উপাদানগুলো (পিপিই) এমনভাবে ডিজাইন করা হয় যা প্রতিটি স্তরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। পিপিই যেমনটি হওয়া উচিত-
পিপিই নির্বাচনের সময় কর্মীদের সাথে আলাপ করে নিতে হবে। ব্যক্তিগত চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং স্টাইলকে বিবেচনা করতে হবে।
পিপিই ব্যবহারের পূর্বে নিম্নলিখিত বিষয়গুলি নিশ্চিত করতে হবে-
প্রশিক্ষণের মাধ্যমে পিপিই এর সঠিক ব্যবহার, সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ সম্পর্কে জানা উচিত। যাদের বা যখন এটি জানতে হবে-
পিপিই পরিধান করার পদ্ধতি (How to Wear PPE :
পিপিই পরিধান করার পদ্ধতি নিম্নে বর্ণনা করা হলো:
ধাপ: ১
১. পিপিই পরিধান করার জন্য পরিকল্পনা করা
২. পিপিই সনাক্ত করা এবং প্রয়োজনীয় পিপিই সংগ্রহ করুন
ধাপ ২
-রাবার বুট পরা। অথবা সু কতার ব্যবহার করা
ধাপ ৩-হেয়ার নেট বা ক্যাপ খুলে ফেলা
ধাপ-৪ (ক) মুখ ঢাল পরিধান করা হলে
- মুখ ঢাল অপসারণ-নিরাপদভাবে মুখ ঢাল ব্যবস্থা করা
ধাপ-৪ (খ)চিকিৎসা মাস্ক এবং চোখের সুরক্ষা পরে থাকলে ।
-পিছনে থেকে গগলস অপসারণ
- পুনরায় প্রসেসিংয়ের জন্য একটি পৃথক কন্ট্রোরে গগলস রাখা
পিছনে থেকে মাস্ক সরান এবং নিরাপদে ব্যবস্থা করা
ধাপ-৫- অ্যাপ্রন খুলে ফেলা
ধাপ-৬- রাবার বুট অথবা সু-কভার খুলে ফেলা
ধাপ-৭- হাত ধোয়া সম্পাদন করা
ওয়ার্কশপে কাজ করার সময় যে কোন দুর্ঘটনা এড়ানোর জন্য অবশ্যই নিরাপদ পোশাক ও নিরাপদ সরঞ্জামাদি পরিধান করা দরকার। যেমন-
যন্ত্রপাতির কোনো প্রকার ক্ষতি সাধনা না করে কার্য সম্পন্ন করে যন্ত্রপাতিগুলোকে সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে রাখাকে যন্ত্রপাতির নিরাপত্তা বলে। যেমন-
(ক) সঠিক নিয়মে মেশিন চালু করা;
(খ) কাজ শেষে মেশিন সঠিকভাবে বন্ধ করা;
(গ) কাজের জায়গা পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা;
(ঘ) কোনো প্রকার গোলযোগ দেখা দিলে সাথে সাথে মেশিন বন্ধ করা এবং দ্রুত মেরামতের ব্যবস্থা করা;
(ঙ) বৈদ্যুতিক সংযোগসমূহ মাঝে মাঝে পরীক্ষা করা ।
সকল প্রকার দুর্ঘটনার হাত হতে ওয়ার্কশপকে রক্ষা করাকে ওয়ার্কশপের নিরাপত্তা বলে । যেমন-
ক) প্রয়োজনীয় প্রোটেকটিভ ডিভাইসসমেত সকল বৈদ্যুতিক সংযোগ ইনসুলেটেড রাখা;
(খ) দাহ্য পদার্থের পাশে ওয়েল্ডিং না করা;
(গ) আগুন নিভানোর উপকরণ, পানি, বালু ও অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের ব্যবস্থা রাখা;
(ঘ) গুদামে আগুন লাগলে দ্রুত ফায়ার স্টেশনে খবর দেওয়া;
(ঙ) কারখানার অভ্যন্তর ও বাহির সর্বদা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা।
অনুসন্ধানমূলক কাজঃ
তোমার প্রতিষ্ঠানের কাছাকাছি যে কোনো একটি সরকারি বা বেসরকারি পোল্ট্রি ফার্ম পরিদর্শন কর। এর কর্মপরিবেশ ও স্বাস্থ্য নিরাপত্তা বিষয়ে নিম্নোক্ত ছকে তোমার মতামত দাও ।
ক) নিরাপদ কাজের অভ্যাস (Safe Practice ) :
খ) অনিরাপদ কাজের অভ্যাস (Unsafe Practice):
বিপদ বা ঝুঁকি হলো যেকোনো বাস্তব অবস্থা বা ঘটনা। যার কারণে কোনো ব্যক্তির বা ধনসম্পদের বা পরিবেশের ক্ষতি বা উৎপাদন ব্যবস্থা বিপত্তি বা হতাহত অথবা দীর্ঘস্থায়ী রোগ ব্যাধি হতে পারে। কিন্তু তা এখনো ঘটেনি। বিপদের সর্বশেষ ফল হলো দুর্ঘটনা। সম্ভাব্য বিপদসমূহ পর্যবেক্ষণ, সনাক্তকরণ এবং দূরীকরণ বা কমানোর ফলে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব। দুর্ঘটনার কারণে ধারাবাহিক ক্ষতি যেমন- স্বাস্থ্য, জীবন, পরিবেশ এবং ধন-সম্পদের ক্ষয়-ক্ষতি হয়।
কর্মক্ষেত্রে বিপদ বা ঝুঁকিকে নিম্নলিখিত ভাবে ভাগ করা যায়-
> ভৌতিক (শারীরিক) ঝুঁকি (Physical Hazards )
> রাসায়নিক ঝুঁকি (Chemical Hazards )
> জৈবিক ঝুঁকি (Biological Hazards )
> মনোসামাজিক ঝুঁকি (Psychosocial Hazards )
> মানসিক ঝুঁকি (Emotional Hazards )
ক) ভৌতিক (শারীরিক) ঝুঁকি (Physical Hazards )
কর্মক্ষেত্রে বিদ্যমান বিভিন্ন ধরনের পদার্থের কারণে যে বিপদের সৃষ্টি হয় তাই ভৌতিক (শারীরিক) বিপদ। বিভিন্ন ধরণের উপাদান যেমন- যন্ত্রপাতি, মেশিন, বিদ্যুৎ, অত্যধিক তাপ বা ঠান্ডা, আর্দ্রতা, অতি শব্দ, কম্পন, চলন্ত বস্তু, কাজের অবস্থা, স্থান ইত্যাদি।
খ) রাসায়নিক ঝুঁকি (Chemical Hazards ):
কাঁচামালসমূহ, উৎপাদিত পণ্য, বিক্রিয়কারী পদার্থ ইত্যাদি কখনো কখনো ভয়াবহ অবস্থার সৃষ্টি করে। যেমন- বিস্ফোরণ, বিকি, বক্র, প্রাপ্ত হওয়া, বিষবা, মরিচা পড়া, জ্বালাপোড়া, ক্যান্সার ইত্যাদি। রাসায়নিক বিপদের জন্য দায়ী বিভিন্ন ধরনের পদার্থগুলো হলো- এসিড, ক্ষার, ডাইস, পেইন্ট, কুয়াশা, দ্রাবক, কটন ডাস্ট, গ্যাস বাদ, ওয়েল্ডিং ধোঁয়া, হাইড্রোজেন, ক্লোরিন, ক্রোমিয়াম, লেড বা সীসা ইত্যাদি।
ফুড প্রসেসিং ইন্ডাস্ট্রিতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ধরণের রাসায়নিক পদার্থ যেমন-
১. ম্যাকাটক্সিন (আলফাটক্সিন)
২. ন্যাচারাল টক্সিন
৩. সামুদ্রিক টক্সিন
৪. ফুড এডিটিভস
৫. পরিবেশদূষণকারী পদার্থ, আর্সেনিক, সীসা, মার্কারি, কেডমিয়াম ইত্যাদি
রাসায়নিক হ্যাজার্ড (Chemical Hazarda) রোধের উপায়:
নিম্নে রাসায়নিক হ্যাজার্ড রোধের উপায় করা হলো:
১. সকল ধরণের খাদ্য এবং প্রস্তুত এলাকা থেকে দূরে সংরক্ষণ কর
২. সকল কেমিক্যাল কন্টেইনারে নাম লিখে লেবেল লাগিয়ে রাখা
৩. অপ্রয়োজনীয় কেমিক্যাল খাদ্য প্রস্তুত এলাকা থেকে সরিয়ে ফেলা
৪. ফুড গ্রেড কনটেইনারে খাদ্য সংরক্ষণ করা
৫. খাদ্য প্রস্তুত এলাকা পরিষ্কার করার সময় ক্লিনিং এজেন্টগুলো খাদ্যদ্রব্য থেকে দূরে রাখা।
গ) জৈবিক ঝুঁকি (Biological Hazards )
ক্ষুদ্র-অনুজীব এবং তাদের বিপাকীয় পদার্থের কারণে জৈবিক বিপদ হয়। যেমন-
(ক) নর্দমার পানিতে সাধারণত বিভিন্ন ধরণের অনুজীব থাকে। সালফারযুক্ত দ্রব্য (যেমন- গ্রিজ, তেল ইত্যাদি) আহার করলে তাদের শরীরে বিপাকীয় উৎপাদক হিসেবে হাইড্রোজেন সালফাইড গ্যাস নিঃসরণ করে। কিছু মাত্রার হাইড্রোজেন সালফাইড খুবই বিষাক্ত। এসবের কারণে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। ব্যাকটেরিয়া এবং পরজীবী কীট যেগুলো ধুলা বালিতে ভেসে বেড়ার, তাদের কারণে শ্বাসতন্ত্রের সমস্যা হয়। এটি এক ধরণের জৈবিক বিপদ।
(খ) প্রাণি এবং প্রাশির অঙ্গ প্রত্যঙ্গ (চামড়া, পশম, চুল ইত্যাদি) থেকে তৈরি পণ্য জৈবিক বিপদের অন্তর্ভূক্ত ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস, ফাংগাস বা পরজীবী কীট, আক্রান্ত পশু, বাহক ব্যক্তি বা দূষিত জৈবিক তরলের মাধ্যমে ছড়াতে পারে। যেমন- অ্যান্থ্রাক্স (ব্যাকটেরিয়া), টিউবারকিউলোসিস (মাইকোব্যাকটেরিয়াম), এইচআইভি, হেপাটাইটিস বি (ভাইরাস), অ্যাসপারজিলাস (ফাংলি), বাইসিনোসিস (এনডোটক্সিন), বার্ড ফ্লু (ভাইরাস), ম্যাড কাউ, সোয়াইন ফ্লু ইত্যাদি।
জৈবিক হ্যাজার্ড রোধের উপায় গুলি উল্লেখ করা হলো :
১. খাদ্য দ্রব্য কাংখিত তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা
২. কাংখিত তাপমাত্রায় রান্না করা
৩. বিশুদ্ধ পানি ব্যবহার করা
৪. অসুস্থ অবস্থায় কাজ না করা
৫. ভালোভাবে হাত ধোয়া
৬. খাদ্য হ্যান্ডলিং এর সময় পিপিই পরিধান করা
৭. সকল তৈজসপত্র ও যন্ত্রপাতি জীবাণুমুক্ত করা
ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি শর্ত (The Conditions for Bacterial Growth)
নিম্নে ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির শর্তগুলো আলোচনা করা হলো:
১. খাদ্য (Food): ব্যাকটেরিয়া বেড়ে ওঠার জন্য যে খাদ্য দরকার হয় তা মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্যের শর্করা, জটিল কার্বোহাইড্রেট এবং প্রোটিন থেকে আসে ।
২. আর্দ্রতা (Moisture): ব্যাকটেরিয়া আর্দ্রতা ছাড়া বাঁচে না। এই কারণে খাদ্যের নিরাপত্তার জন্য খাদ্য প্রস্তুতি এলাকা এবং সরঞ্জামাদি শুকনা রাখতে হবে ।
৩. পিএইচ (pH): একটি দ্রবণের অল্পতার পরিমাপ করা হয়। পিএইচ স্কেলে, ৭ নিরপেক্ষ এবং ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি সাধারণত স্বল্প পরিসরে ঘটে থাকে। খাদ্যদ্রব্যে বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধি প্রতিরোধ করতে টক যুক্ত খাবারগুলি তাদের কম পিএইচ (উচ্চ অ্যাসিড) ব্যবহার করে, তবে ব্যাক্টেরিয়া আরও দূর করার জন্য কিছু কৌশল যেমন- হিমায়ন করা প্রয়োজন ।
৪. বায়ু (Air): এরাবিক ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধির জন্য বায়ুর প্রয়োজন, কিন্তু এনারোবিক ব্যাকটেরিয়া বায়ু ছাড়াই বৃদ্ধি পায়। এনারোবিক অবস্থার খাদ্য, বিশেষ করে রান্না করা খাবার এবং মাংসের কণার মধ্যে উপস্থিত হতে পারে। এই খাবারগুলি ৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের উপরে স্টোরেজ প্রয়োজন ।
৫. সময় (Time): অবস্থার উপর নির্ভর করে ব্যাকটেরিয়া প্রতিটি ১০৩০ মিনিট এ পুনরুৎপাদন হয়। এর অর্থ হলো যদি পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়, তাদের সংখ্যা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পাবে যাতে দূষণ ও রোগ দেখা দিতে পারে।
৬. উষ্ণতা (Warm): ব্যাকটেরিয়া দ্রুত ৫ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড (এই তাপমাত্রা বিপদজনক অঞ্চল) এর মধ্যে দ্রুত পুনরুৎপাদন হয়। তাই এই পরিসরের বাইরে খাবার রাখার জন্য প্রতিটি প্রচেষ্টার প্রয়োজন। ০ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর নিচে কোনো ফুড পয়জনিং (Food Poisoing) ব্যাক্টেরিয়া জন্মায় না। কোন ব্যাকটেরিয়া ৫ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেড এর নিচে বা ৬০ ডিগ্রী সেন্টিগ্রেডের উপরে খাদ্য বিষাক্ত ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধি হয় না। এই কারণে খাবার ৫ ডিগ্রী সেন্টি গ্রেড এর নিচে বা ৬০ ডিগ্রি সেন্টিগ্রেডের উপরে সংরক্ষণ করা উচিত ।
ঘ) মনোস্তাত্ত্বিক ঝুঁকি (Psychological Hazards ) : কর্মক্ষেত্রে কাজ সম্পর্কিত অথবা কাজের অবস্থানগত বিষয় বা কর্মীদের মানসিক চাপ বৃদ্ধি করে। ফলে মনোস্তাত্তিক বিপদ সৃষ্টি হয়। যেমন- মানসিক বিষাদ, কাজের প্রতি একঘেয়েমী ভাব, অস্বস্তি এবং জ্বালাপোড়া ইত্যাদি।
১.১০ বিপদ বা ঝুঁকি নিরন্ত্রণ (Risk Control):
শিল্পকারখানার বিপদ নিয়ন্ত্রণ একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। শিল্পকারখানার ডিজাইন করা থেকে শুরু করে উৎপাদনের সময় এবং কারখানা বন্ধ করা পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া মেনে চলা হয়। এখানে আমরা বিপদ নিয়ন্ত্রণের মূল ও প্রাথমিক ধারণাগুলো বর্ণনা করছি। বর্তমান সময়ে প্রয়োজনীয় সুবিধা অনুযায়ী বিভিন্ন ধরনের বিশেষায়িত ধারণা তৈরি করা হয়েছে। নিম্নে এ সকল ধারণাগুলো বিবেচনা করে বিপদ নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতির বর্ণনা দেয়া হলো-
ক) বিপন্ন বা ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের ধাপসমূহ
কর্মক্ষেত্রে সৃষ্ট বিপদসমূহকে অভিজ্ঞতা সম্পন্ন লোক দিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষার মাধ্যমে চিহ্নিত এবং তালিকা করতে হবে। এর পরবর্তী ধাপ হলো, সম্ভাব্য ক্ষয়ক্ষতির তীব্রতা অনুসারে বিপদকে র্যাংকিং করতে হবে। ধারাবাহিকভাবে বিপদ সমূহকে ঝুঁকির স্তর অনুসারে নিম্নবর্ণিত ক্রমানুসারে র্যাকিং করতে হবে। পরবর্তীতে বিপদের ঝুঁকি দূর করার জন্য ভিন্ন কোনো পদ্ধতি ব্যবহার করা উচিত। যেটি অধিক ঝুঁকিপূর্ণ বিপদকে কম ঝুঁকিপূর্ণ বিপদে রূপান্তর করবে অথবা বিপদকে দূর করবে। এটি সত্য যে, সকল বিপদ পুরোপুরি দূর করা সম্ভব নয়। কিন্তু প্রস্তুতি এমনভাবে থাকা উচিত যেন সহজেই বিপদ নিয়ন্ত্রণ করা যায় ।
খ) ঝুঁকি নিয়ন্ত্রণের (Hazard Control) ক্রম বা পর্যায়:
১.১১ ঝুঁকি অপসারণ :
যেখানে কোনো বিপদ নেই সেখানে আঘাত পাওয়া বা অসুস্থ হওয়ার কোনো ঝুঁকি নেই। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়-
ক) ঝুঁকি সৃষ্টিকারী মালামাল ও যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপনঃ
বিপদ দূর করা সম্ভব না হলে কম ঝুঁকি সম্পন্ন বিকল্প কিছু ব্যবস্থা করতে হবে। এটি এমনভাবে করতে হবে যেন সন্তোষজনকভাবে একই ধরনের কাজ সম্পাদন করা যায়। যেমন-
ওয়ার্কশপে নিরাপদে কাজ করতে তোমরা কোনো কাজে কী ধরনের নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা নিবে তা ছকে লেখ (একটি কাজের নাম পি ব্যবস্থা উল্লেখ করা হলো)-
ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতি সংরক্ষণ :
ওয়ার্কশপে যন্ত্রপাতি রক্ষণাবেক্ষণ:
কোনো ওয়ার্কশপ বা কারখানাকে সচল রাখতে যন্ত্রপাতির পরিকল্পিত রক্ষণাবেক্ষণ একান্ত অপরিহার্য । যন্ত্রপাতির নষ্ট বা ক্ষয় হয়ে যাওয়ার প্রবণতা কমানোর জন্য এবং সম্পদের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য যন্ত্রপাতির পরিকল্পিত ও আদর্শ রক্ষণাবেক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার ।
পারদর্শিতার মানদন্ড
(ক) ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম:
(খ) প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি (টুলস, ইকুইপমেন্ট ও মেশিন) :
(ঘ) কাজের ধারা:
১. প্রথমে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জামসমূহ, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও মালামাল স্টোর হতে সংগ্রহ করো ।
২. তালিকা অনুসারে সুরক্ষা সরঞ্জামাদি যথা নিয়মে পরিধান করো।
৩. শিট মেটালের তৈরি ধাতব ট্রে-এর মধ্যে মোটা বালি ছড়িয়ে দাও ।
৪. জ্বালানী কাঠগুলোকে ঐ বালিভর্তি ট্রে-এর মধ্যে সাজিয়ে নাও ।
৫. জ্বালানী কাঠের মধ্যে কেরোসিন মিশিয়ে কিছুক্ষণ পর দেয়াশলাই দিয়ে আগুন ধরিয়ে দাও ।
৬. আগুন পূর্ণমাত্রায় জ্বলে উঠার সাথে সাথে অগ্নি নির্বাপক এর পিনটি চিত্রের নির্দেশনা অনুযায়ী খুলে দাও ।
৯. শিক্ষক শিক্ষার্থীদের নিয়ে হামাগুড়ি দিয়ে দ্রুত ওয়ার্কশপের পিছনের দরজা (Fire Exit) পর্যন্ত পৌঁছাবে এবং যত দ্রুত সম্ভব দরজা খুলে দৌড়ে সবাইকে নিয়ে বের হয়ে আসবে।
কাজের সতর্কতা:
আত্মপ্রতিফলন: অগ্নিনির্বাপক দিয়ে আগুন নেভানো ও আগুনসৃষ্ট ধোঁয়া হতে ওয়ার্কশপের শিক্ষার্থীদের নিরাপদ স্থানে আশ্রয় গ্রহণ করার দক্ষতা অর্জিত হয়েছে/হয় নাই/আবার অনুশীলন করতে হবে।